তড়িৎ (Electricity)
তড়িৎ বা বিদ্যুৎ এক প্রকার শক্তি।
তড়িৎ
স্থির তড়িৎ
চল তড়িৎ
তড়িৎ (Electricity)
তড়িৎ বা বিদ্যুৎ এক প্রকার শক্তি।
তড়িৎ
স্থির তড়িৎ
চল তড়িৎ
তড়িৎ প্রবাহ (Electric Current)
কোন পরিবাহকের যে কোন প্রস্থচ্ছেদের মধ্যদিয়ে একক সময়ে যে পরিমাণ আধান প্রবাহিত হয়, তাকে তড়িৎ প্রবাহ বলে। তড়িৎ প্রবাহের একক অ্যাম্পিয়ার (ampere)। যে যন্ত্রের সাহায্যে বর্তনীর তড়িৎ প্রবাহ সরাসরি অ্যাম্পিয়ার এককে পরিমাপ করা যায়, তাকে অ্যামিটার বলে। গ্যালভানোমিটার হলো সেই যন্ত্র যার সাহায্যে বর্তনীতে তড়িৎ প্রবাহের অস্তিত্ব ও পরিমাণ নির্ণয় করা যায়।
পরিবাহকের মধ্য দিয়ে ইলেকট্রনের প্রবাহের ফলে চল তড়িৎ সৃষ্টি হয়। আবার চল তড়িৎ দুই প্রকার। যথা: সমপ্রবাহ এবং পর্যাবৃত্ত প্রবাহ।
ক) সমপ্রবাহ (Direct Current or D.C)
তড়িৎ প্রবাহ যদি সর্বদা একই দিকে প্রবাহিত হয় বা সময়ের সাথে তড়িৎ প্রবাহের দিকের কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে সেই প্রবাহকে সমপ্রবাহ বলে। যেমন, তড়িৎকোষ (ব্যাটারি) থেকে আমরা সমপ্রবাহ পাই।
খ) পর্যায়বৃত্ত প্রবাহ (Alternative Current or A.C
যে তড়িৎ প্রবাহ নির্দিষ্ট সময় পরপর দিক পরিবর্তন করে অর্থাৎ যে তড়িৎ প্রবাহের দিক পর্যাবৃত্তভাবে পরিবর্তিত হয় তাকে পর্যাবৃত্ত প্রবাহ বলে। পর্যাবৃত্ত প্রবাহের দিক পরিবর্তন দেশভেদে বিভিন্ন হয়। আমাদের দেশে বাসাবাড়িতে যে পর্যাবৃত্ত প্রবাহ ব্যবহার করা হয় তা প্রতি সেকেন্ডে ৫০ (পঞ্চাশ) বার দিক পরিবর্তন করে। আবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই দিক পরিবর্তন হয় প্রতি সেকেন্ডে ৬০ (ষাট) বার।
নিউরন
নেফ্রন
পেসমেকার
হেপাটোসাইট
রোধ (Resistance)
পরিবাহকের যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ বিঘ্নিত হয়, তাকে রোধ (Resistance) বলে। রোধের একক ওহম (Ohm)।
ও’মের সূত্র (Law’s of Ohm): নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে যে বিদ্যুৎ প্রবাহ চলে, তা ঐ পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের সমানুপাতিক। অর্থাৎ, বিভব পার্থক্য (V) = রোধ (R) ⤫ বিদ্যুৎ প্রবাহ (I) কোনো পরিবাহকের রোধ চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যথা: পরিবাহকের দৈর্ঘ্য, পরিবাহকের প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল, পরিবাহকের উপাদান এবং পরিবাহকের তাপমাত্রা। একই উপাদানের তৈরি সুষম প্রস্থচ্ছেদের লম্বা তারের রোধ ছোট তার অপেক্ষা বেশি হয়। একই উপাদান এবং একই দৈর্ঘ্যের মোটা তারের চেয়ে চিকন তারের রোধ বেশি হয়।
১. বৈদ্যুতিক পাখার ঘূর্ণনের গতি রেগুলেটরের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। রেগুলেটরে থাকে পরিবর্তনশীল রোধ। রেগুরেটরের রোধ বাড়িয়ে দিলে বিদ্যুৎ প্রবাহ কমে যায়, ফলে পাখা ধীরে ঘোরে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয় না কারণ রেগুলেটরে সাশ্রয়কৃত বিদ্যুৎ তাপশক্তি হিসেবে অপচয় হয়।
২. সাধারণ বৈদ্যুতিক বাতির ফিলামেন্ট রোধের কারণে তাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তাপশক্তি হিসেবে বিদ্যুতের অপচয় হয়।
তড়িৎ পরিবাহিতা (Electric Conductance)
তড়িৎ পরিবাহিতা তড়িৎ মাধ্যমের একটি ধর্ম যা এর মধ্য যে তড়িৎ প্রবাহিত করতে সহায়তা করে। তড়িৎ পরিবাহিতার একক সিমেন্স। তড়িৎ পরিবাহী ধর্মের উপর ভিত্তি করে পদার্থসমূহকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- পরিবাহী, অর্ধপরিবাহী এবং অন্তরক।
(ক) পরিবাহক (Conductor): যে সব বস্তুর ভিতর তড়িৎ আধান সহজে চলাচল করতে পারে, তাদের বিদ্যুৎ পরিবাহী বলে। সকল ধাতু, মানবদেহ, আর্দ্র বায়ু, পানি, মাটি প্রভৃতি বিদ্যুৎ পরিবর্তন করে। গ্রাফাইট অধাতু হলেও তড়িৎ পরিবাহী। রূপা সর্বোত্তম তড়িৎ পরিবাহক। আর্দ্র বায়ু বা মেঘযুক্ত তড়িৎ পরিবাহী বলে এর মধ্যে দিয়ে বিমান চালনা করা ঝুঁকিপূর্ণ।
(খ) অন্তরক বা অপরিবাহক (Insulator): যেসব বস্তুর ভিতর দিয়ে তড়িৎ আধান চলাচল করতে বা পরিবাহিত হতে পারে না তাদের বলা হয় অন্তরক। যেমন; অধাতু,প্লাস্টিক, কাঠ, কাঁচ, রাবার, চীনামাটি, রেশম, শুষ্ক বাতাস প্রভৃতি অন্তরক পদার্থ।
(গ) অর্ধপরিবাহী (Semiconductor): যেসব পদার্থের তড়িৎ পরিবাহীতা পরিবাহী পদার্থের চেয়ে অনেক কম, কিন্তু অন্তরক পদার্থের চেয়ে অনেক বেশী, তাদের অর্ধপরিবাহী বলে। যেমন : সিলিকন, জার্মেনিয়াম, ক্যাডমিয়াম সালফাইড, গ্যালিয়াম আর্সেনাইড, ইনডিয়াম এবং অ্যানটিমোনাইড। তাপমাত্রা বাড়লে প্রায় সকল পরিবাহকেরই পরিবাহিতা হ্রাস পায়। তবে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। সিলিকন, জার্মেনিয়াম ইত্যাদি অর্ধপরিবাহী ধাতুর তাপমাত্রা বাড়লে এদের পরিবাহীতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। কার্বন অর্ধপরিবাহী না হলেও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে এর পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
তড়িৎ ক্ষমতা (Electrical Power)
কোনো পরিবাহক বা তড়িৎ যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে এক সেকেন্ড ধরে তড়িৎ প্রবাহের ফলে যে কাজ সম্পন্ন হয় বা যে পরিমাণ তড়িৎ শক্তি অন্য শত্তিতে (আলো, তাপ, যান্ত্রিক শক্তি ইত্যাদি) রূপান্তরিত হয়, তাকে তড়িৎ ক্ষমতা বা বৈদ্যুতিক ক্ষমতা বলে। বৈদ্যুতিক ক্ষমতাকে P দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
P = Vl = l2R = V2/R
১ ওয়াট = ১ ভোল্ট × ১ অ্যাম্পিয়ার।
তড়িৎ ক্ষমতার একক ওয়াট (watt)। তড়িৎ ক্ষমতাকে কিলোওয়াট এবং মেগাওয়াট এককেও প্রকাশ করা হয়।
১ কিলোওয়াট = ১০৩ ওয়াট
১ মেগাওয়াট = ১০৬ ওয়াট
একই বিভব পার্থক্যের কোনো বৈদ্যুতিক বাতির হোল্ডারে ৪০ ওয়াট, ৬০ ওয়াট এবং ১০০ ওয়াটের তিনটি বাতি পরপর সংযোগ করলে দেখা যাবে উজ্জ্বলতার পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে ১০০ ওয়াটের বাতির ক্ষমতা বেশি হওয়ার কারণে বাতিটি সবচেয়ে বেশি আলো বিকিরিত করবে।
তড়িৎ শক্তি (Electric Energy)
কাজ করার সামর্থকে শক্তি বলে। বিদ্যুৎ শক্তির বাণিজ্যিক একক ‘কিলোওয়াট-ঘন্টা’। এক কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র এক ঘন্টা কাজ করলে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি খরচ হয়, তাকে এক কিলোওয়াট-ঘন্টা বলে। সারা বিশ্বের বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী সংস্থাগুলো এই একক ব্যবহার করে বিদ্যুৎ বিল প্রণয়ন করে। এ একককে বোর্ড অব ট্রেড ইউনিট বা সংক্ষেপে শুধু ইউনিটও বলে। অর্থাৎ এক কিলোওয়াট ঘন্টাকে এক ইউনিট ধরা হয়।
১ ইউনিট = ১ কিলোওয়াট – ঘন্টা = ৩৬০০ কিলোজুল
= ১০০০ ওয়াট-ঘন্টা = ৩.৬ × ১০৬ জুল।
বৈদ্যুতিক বিল কিলোওয়াট-ঘন্টা (Kilowatt-hour) বা B.O.T এককে হিসাব করা হয়।
বাতিতে লেখা 220V – 60W এর অর্থ
220V বিভব পার্থক্যকে বাতিটি সংযুক্ত করলে বাতিটি সবচেয়ে বেশি আলো বিকিরণ করবে এবং প্রতি সেকেন্ডে 60 Joule হারে বৈদ্যুতিক শক্তি আলো ও তাপ রূপান্তরিত হবে।
প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ বার বন্ধ হয়
প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ বার একক দের্ঘ্য অতিক্রম করে
প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ বার দিক বদলায়
প্রতি সেকেন্ডে বিদ্যুৎ প্রবাহ ৫০ বার উঠানামা করে
ফিউজ (Fuse)
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিতে একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে তা নষ্ট হয়ে যায়। এ ধরণের বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা এড়াবার জন্য ফিউজ তার ব্যবহার করা হয়। ফিউজ হচ্ছে নিম্ন গলাঙ্কবিশিষ্ট ছোট সরু তার যা টিন (২৫%) ও সীসা (৭৫%) এর মিশ্রণে তৈরি একটি সংকর ধাতু।
সার্কিট ব্রেকার (Circuit Breaker)
সার্কিট ব্রেকার এক ধরণের ফিউজ যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বর্তনী ভেঙ্গে দেয় আবার জোড়া লাগায়। বর্তনীতে কোনো কারণে হঠাৎ প্রবাহ বেড়ে সার্কিট ব্রেকার অফ হয়ে যায়। আবার বিদ্যুৎ প্রবাহ স্বাভাবিক হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন হয়ে যায়। এভাবে সার্কিট ব্রেকার অতিমাত্রায় বিদ্যুৎ প্রবাহজনিত দুর্ঘটনা পথকে উদ্দেশ্যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করে।
তাড়িত চৌম্বক আবেশ (Electromagnetic Induction)
কোন তার বা তার কুন্ডলীর কাছে আমরা যদি কোন চুম্বককে নাড়াচাড়া করি বা আনা নেওয়া করি বা কোন চুম্বকের নিকট কোন তার কুন্ডলীকে আনা নেওয়া করি, তাহলে তার কুন্ডলীতে তড়িৎপ্রবাহ উৎপন্ন করে। একে তাড়িতচৌম্বক আবেশ বলে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডেকে তাড়িতচৌম্বক আবেশের আবিষ্কর্তা বলা হয়।
দূর-দূরান্তে তড়িৎ প্রেরণ
পাওয়ার স্টেশনে তড়িৎ উৎপাদন করা হয়। তড়িৎকে পাওয়ার স্টেশন থেকে একটি প্রেরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সারাদেশে পাঠানো হয়। এই ব্যবস্থায় পাওয়ার স্টেশনগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ব্যবস্থার নাম জাতীয় গ্রীড। তড়িৎ প্রেরণ করা হয় তারের মাধ্যমে। এ সব তার উচু টাওয়ারের মাধ্যমে টানানো থাকে। প্রেরক তারে যে রোধ থাকে তা খুব সামান্য কিন্তু এই রোধ তাৎপর্যপূর্ণ রোধের কারণে তড়িৎ প্রবাহের সময় তড়িৎ শক্তি তাপ শক্তি হিসাবে অপচয় হয়। দূরত্ব যত বেশি হয়, অপচয়ও তত বেশি হয়। এজন্য অধিক দূরত্বে তড়িৎ প্রেরণের সময় অপচয় রোধকল্পে আরোহী বা স্টেপআপ ট্রান্সফর্মারের সাহায্যে তড়িৎ প্রবাহ কমিয়ে ভোল্টেজ বাড়ানো হয়। এজন্য টাওয়ারের তারে উচ্চভোল্টেজের তড়িৎ থাকে, কিন্তু তড়িৎ প্রবাহের মান কম থাকে।
উচ্চ ভোল্টেজ এবং কম মানের তড়িৎ প্রবাহ গ্রাহকের ব্যবহার উপযোগী নয়। তাই এই ভোল্টেজ আবার অনেকগুলো অবরোহী বা নিম্নধাপী ট্রান্সফর্মারের মধ্য দিয়ে চালনা করা হয়। এতে ভোল্টেজ কমে যায় এবং তড়িৎ প্রবাহের মান বৃদ্ধি পায়। ফলে তড়িৎ গ্রাহকের উপযোগী হয়। বাংলাদেশে উচ্চ ভোল্টেজকে কমিয়ে ২২০ V নিয়ে আসা হয়।